উচিত জবাব কখনও কথায় দিতে হয় না।

উচিত জবাব কখনও কথায় দিতে হয় না, দিতে হয় কাজ দিয়ে। নামকরা ব্রান্ড ল্যাম্বোরগিনির নাম তো আপনারা সবাই কমবেশি শুনেছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন? এই ল্যাম্বোরগিনির মালিক ছিলেন একজন ট্রাক্টর মেকানিক!



ইতালির এক দরিদ্র কৃষকের ঘরে জন্ম হয় ফেরুচ্চিও ল্যাম্বোরগিনির। তখন মাত্রই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। ফেরুচ্চিও বেশ ভালো মেকানিক্যাল কাজ জানতেন। যুদ্ধ শেষে নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ট্রাক্টর মেরামতের ব্যবসা।


আস্তে আস্তে ব্যবসা বড় হতে লাগল। একদিন শখের বশে তিনি একটা ফেরারি গাড়ি কিনে ফেললেন। সেই সময় গাড়ীর জগতে ফেরারি খুব জনপ্রিয় একটি ব্র‍্যান্ড, সবাই এক নামে চেনে।


কিন্তু গাড়ি কেনার পরই শুরু হলো যত সমস্যা। গাড়ির ক্লাচ নিয়ে ফেরুচ্চিও শান্তি পাচ্ছিলেন না। তার কাছে মনে হলো এটাকে আরো ভালোভাবে তৈরি করা যেতে পারতো!


যেই ভাবা সেই কাজ। ফেরুচ্চিও ঠিক করলেন এটা তিনি ফেরারির এর মালিককে জানাবেন।

 

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তিনি দেখা করলেন ফেরারির প্রতিষ্ঠাতা এনজো ফেরারির সঙ্গে।


এনজো চুপ করে ফেরুচ্চিওর কথা শুনলেন। এরপর তাচ্ছিল্যের স্বরে বললেন, "তুমি তো ট্রাক্টর বানাও, গাড়ির তুমি কি বোঝো?"


কথাটা মারাত্মকভাবে গায়ে লাগল ফেরুচ্চিও ল্যাম্বোরগিনির। সঙ্গে সঙ্গে ফেরারির অফিস থেকে বের হয়ে চলে আসলেন তিনি। ল্যাম্বরগিনি এই অপমান মেনে নিতে পারেননি। এরপর সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি নিজেই এমন এক গাড়ি বানাবেন যা ফেরারিকেও হার মানাবে।


বাড়িতে এসেই শুরু করলেন নিজের কোম্পানির জন্য স্পোর্টস কার এর এর ডিজাইন। আর মাত্র চার মাসের মধ্যেই বানিয়ে ফেললেন নিজের কোম্পানির প্রথম স্পোর্টস কারটি। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হলো ল্যাম্বোরগিনি। তার বানানো প্রথম ল্যাম্বরগিনি গাড়িটির মডেল ছিল— “ল্যাম্বরগিনি৩৫০জিটিভি”


অবশেষে ডিজাইন আর শক্তিশালী ইঞ্জিনের জন্য এটি রাতারাতি ক্রেতাদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠল। শুরু হয় গেল ফেরারির সঙ্গে ল্যাম্বোরগিনির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।


ল্যাম্বোরগিনি এখন পর্যন্ত ২,৩০,০০০ টি গাড়ি তৈরি করেছে পুরো বিশ্বে। কোম্পানির মার্কেট ভ্যালুয়েশন প্রায় ১৯.৭ বিলিয়ন ডলার! 


২০২৪ সালের নভেম্বর মাসের রিপোর্ট অনুযায়ী ল্যাম্বোরগিনি আমেরিকার মার্কেটে ফেরারির চেয়েও অনেক বেশি জনপ্রিয়।


একবার একটু ভাবুন তো, সেইদিনের সেই ট্রাক্টর মেকানিক যদি জিদ না করতো, যদি ভাবতো ধুর আমি শুধু আমার কাজটাই করি, তাহলে কি কোনোদিন ল্যাম্বোরগিনি তৈরি হতো বা গল্পটা এরকম হতো?


এমন অনেক ধরনের বাধা-বিপত্তি আমাদের জীবনেও আসে। মাঝে মাঝে মনে হয় এই বুঝি সবকিছু শেষ হয়ে গেল, আমাকে দিয়ে আর কিছু হবে না।


আমরা তখন নিজের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। আমরা এটা ভুলে যাই— আমি না পারলে আর কে পারবে! যা করার আমাকেই তো করতে হবে, তাই না? 


নিজের জন্য এমন একটা গল্প লিখে যেতে হবে যেটা আমি গর্ব করে সবার কাছে বলতে পারব।


অনেকেই আপনাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করবে, পিছনে ট্রল করবে, বার বার থামিয়ে দেবে‌, আপনার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত করুন যেন আপনার কাজই একদিন আপনার হয়ে জবাবটা দিয়ে দেয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url