জেদী বাচ্চা মানেই বুদ্ধিমান বাচ্চা।

আমরা যখন কোনো শিশুকে জেদ করতে দেখি, বেশিরভাগ সময়ই আমরা বিরক্ত হই। আমরা ভাবি ও কেন কথা শুনতেছে না, কেন এমন করতেছে। 

আসলে, বেশিরভাগ সময়েই এই জেদ কোনো সমস্যা নয়, বরং শিশুর বুদ্ধিবিকাশের সবচেয়ে শক্তিশালী লক্ষণ।

জেদ মানে শিশুটি ভাবতে শিখছে

একটি শিশু যখন “না” বলে, কিংবা নিজের মতামত ধরে রাখে-

সে মূলত বোঝাতে চায়, “আমারও বুঝার ক্ষমতা আছে। আমি নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিতে চাই।


এবং এটিই তাকে ভবিষ্যতে আত্মবিশ্বাসী ও সিদ্ধান্তক্ষম একজন মানুষ বানায়।

অভিভাবকের প্রথম দায়িত্ব: শান্ত থাকা

শিশুর জেদ যত বাড়ে, আমাদের রাগ তত বেড়ে যায়।

কিন্তু রাগ দেখালেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।

আপনি যদি স্থির, ধীর এবং শান্ত স্বরে কথা বলেন,

শিশুটিও ধীরে ধীরে নরম হয়ে আসে।


কখনও কখনও আপনার শান্ত মুখভঙ্গিই কথার চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।

জেদ সামলানোর ২টি কার্যকর কৌশলের একটি হচ্ছেঃ খেলার ছলে উল্টো দিকে নেওয়া (Reverse Psychology)

শিশুকে কখনো কঠোরভাবে নিষেধ করলে সে উল্টো সেটাই করতে চায়।

যেমন- আপনি বললেন: “আজ তুমি দুধ খেও না।”

সে বলবে: “না, আমি খাব!”


কারণ সে নিজের সিদ্ধান্তে দৃঢ় থাকতে ভালোবাসে।

এই মানসিকতা বুঝতে পারলে পরিস্থিতি খুব সহজে সামলানো যায়।


শিশুকে ছোট্ট “বিকল্প” দেওয়া

শিশুরা আদেশ পছন্দ করে না, কিন্তু পছন্দ করে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়া।


আপনি যদি বলেন- “দুধ খাও।”

সে না-ও বলতে পারে।

কিন্তু যদি বলেন-

“তুমি দুধ গরম খাবে, নাকি ঠান্ডা?”

সে সাথে সাথে একটা বেছে নেবে।


কারণ সিদ্ধান্তটা এবার তার নিজের,

আপনার কথাও মানা হলো, শিশুটিও খুশি।

এক মা তার শিশুকে বাইরে নিতে পারছিলেন না।

শিশুটি জেদ ধরে বলছিল, “যাবো না!”


মা তখন মজা করে বললেন,

“বাইরে গেলে এক চোখ বন্ধ করে যাবে, না দুইটা?”

শিশু হেসে বলল,

“দুইটা!”


এই একটুখানি বিকল্পই জেদের জায়গায় এনে দিল আনন্দ, এটাই win win situation.

তবে এটাও সত্যি যে, জেদী শিশুর সঙ্গে আচরণে ধৈর্য থাকতে হবে। তারা নিজের মতো করে ভাবে এবং সেই ভাবনাটাই তাদের শক্তি। 

আপনি যদি সেই ভাবনাকে শ্রদ্ধা করেন, তাহলে শিশুটিও আপনাকে শ্রদ্ধা করতে শিখবে।

সাধারণত দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সে শিশুরা সবচেয়ে বেশি জেদ প্রকাশ করে। কারণ এই বয়সে তারা স্বাধীন হতে শেখে এবং নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুশীলন করে। 

এটি তাদের স্বাভাবিক বিকাশের একটি ধাপ। আপনি যদি এই সময়টায় ধৈর্য ধরে শিশুর আচরণকে বুঝতে পারেন, তাহলে সে ধীরে ধীরে দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে।

জেদকে দমন করার চেষ্টা না করে বরং বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করা উচিত। কারণ জেদ মানে শুধু “না” বলা নয়, এটি এক ধরনের চিন্তার প্রকাশ। 

আপনি যদি সেই চিন্তাকে জায়গা দেন, তবে একদিন এই জেদী শিশুই আত্মবিশ্বাসী, সচেতন ও দৃঢ় মানসিকতার একজন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url