আপনি কি সত্যিই জানেন কত টাকা থাকলে আপনার জীবন “নিরাপদ”?
বাংলাদেশে ১০ জনের মধ্যে ৮ জনই জানে না। কিন্তু এই প্রশ্নটা যে এতবার শুনেছি-
টাকা কি করবো, কোথায় রাখবো?
মানুষ তার ফাইন্যান্স নিয়ে যত দুশ্চিন্তা করে, তার যেন শেষ নাই। কেউ বলে এক লাখ টাকা কোথায় ইনভেস্ট করবো, কেউ বলে দশ লাখ কোথায় রাখবো, আবার প্রবাসীরা হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠায় তাদের টাকার দুশ্চিন্তা নিয়ে।
কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হইলো, যখনই কাউকে জিজ্ঞেস করেন তার ফাইনান্সিয়াল টার্গেট কত, বেশিরভাগই বলতে পারে না।
আর যারা পারে, তারাও জাস্টিফাই করতে পারে না কেন তাদের সেই টার্গেট। তারা জানে না কত সেভ করবে, কিভাবে সেভ করবে, আর তার সারভাইভালের জন্য হাতে কত টাকা থাকা জরুরি।
আজকে ঠিক এই জায়গায় আমি তিনটা এক্স্যাক্ট ফর্মুলা নিয়ে কথা বলব। এই তিনটা ফর্মুলা আপনি কৃষক হন, চাকরিজীবী হন বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হন, যে-ই হন, যদি ফলো করেন ইনশাআল্লাহ আপনি ফাইন্যান্সিয়ালি সাউন্ড থাকবেন।
আর এই ফর্মুলার বেসিস হলো “হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের হার্ড রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান”। কারও মনে সন্দেহ থাকলে আপনি নিজেও রিসার্চটা পড়ে নিতে পারেন।
ফর্মুলা ১: সারভাইভাল ফান্ড
বেশিরভাগ মানুষের সমস্যা অ্যাসেট না থাকা না, সমস্যা “লিকুইড টাকা” না থাকা। জমি আছে, দোকান আছে, কিন্তু প্রয়োজনের সময় হাতে ক্যাশ নাই। তাই হার্ভার্ড রিসার্চে বলা হয়েছে মিনিমাম এক বছরের খরচ আপনার হাতে লিকুইড থাকতে হবে।
ধরুন আপনার মাসিক খরচ ৮০,০০০ টাকা। তাহলে বার্ষিক খরচ দাঁড়াল আনুমানিক ১০ লাখ টাকা। এই ১০ লাখ টাকা আপনার হাতে ক্যাশ, গোল্ড, অথবা ফার্মারদের ক্ষেত্রে গরুর মতো ইজি-টু-লিকুইড জিনিস হিসেবে থাকতে হবে।
“ইনভেস্ট করব ভাই” এর আগে প্রশ্ন হচ্ছে, আপনার ইমার্জেন্সি ফান্ড আছে?
১০ লাখ টাকা হাতে আছে আবার ২০ লাখ টাকার ওইদিকে লোন আছে, তাইলে ভাই আপনি
ইনভেস্টমেন্টের কথা বলতেছেন কেন?
আপনার প্রথম কাজ হবে সেই লোন শোধ তারপর সারভাইভাল ফান্ড তৈরি করা। এগুলা করা হয়ে গেলে আপনি ইনভেস্টমেন্টের কথা বলতে পারেন।
এরপর আছে লেভেল বি-
দুই থেকে পাঁচ বছরের খরচ আপনার হাতের কাছাকাছি ইনভেস্টমেন্টে থাকতে হবে, যেমন স্টক, রেডি-টু-সেল প্রপার্টি বা যেকোনো ইজি-এক্সিট অ্যাসেট।
পুরোপুরি ক্যাশ লাগবে না, কিন্তু যেকোনো সময় যেন চাইলে বের করে আনতে পারেন।
ফর্মুলা ২: আপনার ফাইন্যান্সিয়াল টার্গেট কত হওয়া উচিত?
আপনি জীবনে কোন পরিমাণ টাকা নিয়ে সিকিউর থাকতে পারবেন, এই হিসাবটা পরিষ্কার না করলে জীবনজুড়ে বিভ্রান্ত থাকতে হবে।
হার্ভার্ড উনিভার্সিটি বলছে,
আপনার বার্ষিক খরচ × ২৫ থেকে ৩৩
সহজ করে বলি- ধরুন, আপনার মাসিক খরচ ৮০,০০০। বছরে ১০ লাখ
এখন ১০ লাখ × ৩০ = ৩ কোটি টাকা।
এর নিচে আপনি রিটায়ারমেন্ট বা ফাইনান্সিয়াল সিকিউরিটির স্বপ্ন দেখবেন না।
এখানে ইনফ্লেশন ধরা লাগবে না, কারণ ইনফ্লেশন ধরলে টার্গেট এত বড় হবে যে মানুষ সারাজীবন নিজেকে গরিবই ভাববে।
মূল কথা
আপনি যতই ইমোশনাল হন, যদি আপনার খরচ বছরে ১০ লাখ হয়, আপনার টার্গেট হইতে হবে ৩ কোটি টাকা।
ফর্মুলা ৩: কতটুকু সেভ করবেন?
এবার আসল কাজ, সেভিং।
ধরেন একটা পিজ্জা, ওইটাকে চারটা সমান ভাগ করেন।
২৫% সেভিং বাধ্যতামূলক রাখেন সারভাইভ করার জন্য, এটা মিনিমাম। এর নিচে গেলে আপনি কোনোদিনই টার্গেট পূরণ করতে পারবেন না।
এখন অনেকে বলতে পারেন, ইয়াহিয়া ভাই আমার বেতনই তো কম!
তাইলে ভাই আপনি বেতন বাড়ান। নিজের স্কিল বাড়ান। বা ক্যারিয়ার পাল্টান। ঢাকায় খরচ বেশি হলে শহর ছারেন, গ্রামে যান। কিন্তু ২৫% সেভিং না করলে আপনি সবসময়ই বিপদে থাকবেন।
আর যদি চান তাইলে ৫০% সেভিং রাখতে পারেন সেটা সচ্ছলতা ও গ্রোথের জন্য কাজে লাগেব।
যদি বড় কিছু করতে চান যেমন ব্যবসা, তাইলে তখন আপনার এই টাকা কাজে লাগবে।
আর একান্তই যদি আপনি খুব বড় কিছু তৈরির জন্য করতে চান তাইলে ৭৫% সেভিং করতে পারেন। যারা কোম্পানি, ফাউন্ডেশন, বড় ব্যবসা দাঁড় করায়, তারা অনেকেই এই মডেল ফলো করছে।
সব সেভিং হিসাব ট্যাক্স, যাকাত, ইমারজেন্সি ফান্ড বাদ দিয়ে, তারপর করবেন।
মোট কথা হচ্ছে,
১) এক বছরের খরচ হাতে রাখবেন, ২ থেকে ৫ বছরের খরচ ইজি-এক্সিট ইনভেস্টমেন্টে রাখবেন।
২) আপনার বার্ষিক খরচ × ৩০ = আপনার ফাইনান্সিয়াল সিকিউরিটি নম্বর।
৩) মিনিমাম ২৫% সেভ করবেন, নইলে সব ভেঙে পড়বে।
আপনার আয় যতই হোক, সঠিক পরিকল্পনা না থাকলে সেটা হারিয়ে যাবে।
আর আয় কম হলেও সঠিক পরিকল্পনা থাকলে ভবিষ্যৎ ও বর্তমান সুন্দর সম্ভব।
