শিশুরা কথায় নয়, ভালোবাসায় বড় হয়।

অফিস শেষে ক্লান্তি থাকতেই পারে, কিন্তু সন্তানকে নিজের বিরক্তি দেখাবেন না… সে সারাদিন আপনার ফেরার অপেক্ষায় থাকে..

একজন বাবা যখন দিনের শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়ান, তখন হয়তো তাঁর মাথায় থাকে অফিসের চাপ, দায়িত্ব, স্ট্রেস, চিন্তা—

কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে ঘরের ভেতরে একটা ছোট্ট হৃদয় থাকে, যে সারাদিন ধরে শুধু বাবার জন্য অপেক্ষা করেছে।


শিশুরা সময় বোঝে না…

তারা শুধু জানে—

“বাবা আসবে… আর আমি দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরবো।”

এই ছোট্ট আশা নিয়ে সে মিনিট গুনে গুনে অপেক্ষা করে, প্রতিটা শব্দে, প্রতিটা দরজার আওয়াজে ভাবে—

“এই বুঝি বাবা চলে এল!”


তাই বাবা ক্লান্ত বা বিরক্ত দেখলে, ওর ছোট্ট মনটা যেন আচমকা থেমে যায়।

মনে মনে ভাবে—

“বাবা কি আমাকে দেখে খুশি না? আমি কি কিছু ভুল করেছি?”

এই একটুকু দুঃখই তার কোমল মনে অজান্তেই গভীর ছাপ ফেলে দিতে পারে।


একটা শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হলো বাবা-মায়ের কোলে।

বাবা ঘরে ফিরলে তার পৃথিবীটা যেন আলাদা আলোয় ভরে ওঠে।

সে ভাবতে থাকে—

বাবা কি আজ তাকে গল্প শোনাবে?

বাবা কি তাকে আদর করে কোলে নেবে?

বাবা কি তার সাথে একটু খেলবে?

এই ছোট ছোট আশা আর ভালোবাসাই তাকে দিনজুড়ে বাঁচিয়ে রাখে।


তাই বাবা ঘরে ফিরেই—

  • একটা হাসি দিন
  • তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরুন
  • দু’মিনিট হলেও মন দিয়ে তার কথা শুনুন
  • সে বানানো ছোট্ট আবদারগুলো পূরণ করুন
  •  তার আনন্দে আপনার আনন্দ দেখান


শিশুরা খুব সামান্য জিনিস থেকে ভালোবাসা খুঁজে নেয়—

আপনার হাত ধরা, আপনার কোলে মাথা রাখা, আপনার কণ্ঠের নরম ডাক—

এগুলোই তার মনে নিরাপত্তা, ভরসা আর বিশ্বাসের বীজ বপন করে।


আর একটা কথা—

শিশুরা হয়তো ছোট, কিন্তু তারা অনুভব করে অনেক কিছুই…

বাবার চোখের ক্লান্তি, বাবার মুখের হাসি, বাবার স্পর্শের উষ্ণতা—

সবই তাদের মনে জায়গা করে নেয়।

তারা শিখে ভালোবাসতে, শিখে সম্মান করতে, শিখে কিভাবে মানুষ হতে হয়—

বাবাকে দেখে, বাবার আচরণ থেকে।


বাবার পাঁচ মিনিটই তার সবচেয়ে বড় সুখ,

বাবার মনোযোগই তার আত্মবিশ্বাস,

বাবার আদরেই সে শেখে পৃথিবীটা সুন্দর।


আর শেষ পর্যন্ত সন্তান আর বাবার এই নরম সেতুটাই হয়ে যায় ওর পুরো ভবিষ্যতের ভিত্তি।

আজ যেভাবে তাকে ভালোবাসবেন, আগলে রাখবেন—

আগামী দিনে সে তেমনই শক্ত, আদবকায়দা জানা, ভালোবাসায় ভরা মানুষ হয়ে উঠবে। 


কারণ—শিশুরা কথায় নয়, ভালোবাসায় বড় হয়।

আর দিনের শেষে বাবার একটুকু সময়—

তার ছোট্ট দুনিয়াটাকে আলোয় ভরিয়ে দিতে যথেষ্ট। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url