সাকসেস আসলে কী?

ছোট থেকে নিজে কিছু একটা করা অব্দি যে বিলাসিতাটা ছিল,জোরজবরদস্তি করে হলেও বাবা,ভাই,পরিবার থেকে আদায় করে নেয়ার যে বেপারটা ছিল,তা এখন নিমিষেই হারিয়ে গেলো।

অপচয়,অযথা,অকারণে,অহেতুক যত যাই করতাম,যখন নিজে ইনকাম করার মাধ্যম তৈরি করছি,স্ট্রাগল করতে শিখছি তখন থেকে বুঝতে পারছি।আসলে মাধ্যবিত্ত পরিবারে কিংবা সামথিং কোনো ক্লাসের বাবার মুখে কেন দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায়।কেন সন্তানের চাওয়ার সাথে সাথে লকার খুলে কিংবা পকেট থেকে ক্যাশ তুলে দিতে পারে না-!কেন সন্তান কে বলে তোমার কবে লাগবে আমায় ২/১ দিন আগে জানিয়ে দিও-!


ভেবেছেন কখনো কেন সময় টা নেয়-?হয় তো না কেন ভাববেন বলুন তো?আপনার তো যা চাই তা পেলেই হলো তাই না?আজ যখন নিজে উপার্জন করি,

নিজ হাতে টাকা ধরি,নিজের প্রতিটি কষ্টার্জিত টাকার মূল্য টের পাই,তখনই বুঝতে পারি বাবা যে দুইদিন আগে বলবা,কথাটা বলতেন তা আসলে অস্বীকার নয়,সময় চাইতেন,নিজেকে প্রস্তুত করার,লড়াই করার,হিসেবটাকে একটু বদলে আপনার জন্য জায়গা করে দেওয়ার।


দেখবেন আপনার বাবা ভাই কিংবা স্বামী তখনই উৎফুল্ল হয়ে হাসবে আর চোখের কোণে চিকচিক করবে,যখন আপনার চাওয়া আপনার শখ পূরণ করে আপনাকে হাসতে দেখবে খিলখিল করে।শৈশব-কৈশোরে আমরা কখনো দেখি না।বাবার ক্লান্ত ভ্রূকুটি,মায়ের লুকানো দীর্ঘশ্বাস,ভাইয়ের হিসেব কষে চলা খরচ।আমরা শুধু চাই,নতুন কিছু,ভালো কিছু,একটু বেশি কিছু।আর তারা তাদের সাধ্যের ভেতর থেকে অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টা করে।শুধু এই জন্য যে সন্তানটা একবার হেসে উঠবে।


এই তো বাবা ভাই কিংবা প্রিয় মানুষের আধল থেকে বের হয়ে দীর্ঘ দু-বছরের চাকুরী জীবনের জার্নি,নিজের জন্য এক টাকা খরচ করতে বাবার মতো সার্থপর হয়ে যা-ই,নিজের জন্য ভালো কিছু করার কথা ভাবার আগে পরিবারের সদস্য গুলার কথা ভাবি তাদের কি লাগবে।যেমন ভাবতো বাবা-!অথচ পরিবার আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে আমি যেন আমার জন্য করি আমি বিলাসিতায় বাঁচি।কিন্তু এখন থেকে তাদের সুখের কথা ভাবতে শিখে গেছি।


এখন বুঝি,পরিবার শুধু সম্পর্ক নয়,পরিবার হলো দায়বদ্ধতা,ভালোবাসার দায়িত্ব।একসময় যাদের মুখের হাসি ছিল আমার আনন্দ,আজ তাদের আরাম,তাদের নিরাপত্তা,তাদের ছোট একটা খুশি হয়ে উঠেছে আমার নিজের অর্জন।আমাদের জন্য কিছু একটা করতে পেরে বাবা আর ভাই প্রিয় মানুষ যেমন খুশি হয়,তেমন খুশি এখন আমি হই বেপার টা এতো এতো অপূর্ব ভাষায় প্রকাশ করার মতো না,আজ যখন নিজের টাকা দিয়ে কিছু কিনতে যাই,মন প্রথমে ফিসফিস করে।বাবার কি কিছু লাগবে?মায়ের ওষুধ আছে?ভাইয়ের কোনো দরকার আছে?যেমন বাবা ভাবতেন আমার জন্য প্রতিদিন।এই ভাবনাই আমাকে বড় করেছে।এই ভাবনাই আমাকে মানুষ করেছে।


কিন্তু কিছু করতে না পারলে ঠিক বাবার মতোই দুশ্চিন্তার ভাঁজ টেনশনে চোখের নিচে চাপ,ঘুম না আসা এপাশ-ওপাশ করা,এসব এখন আমারও হয়।সবকিছু এসে ভর করে।বুঝি ভালোবাসার দায়িত্বও কখনো কখনো কাঁধ ভারী করে দেয়।


এভাবেই ধীরে ধীরে জীবন আমাকে বদলে দিয়েছে।চাওয়া পাওয়ার হিসেবটা একসময় ছিল একরোখা,আমার লাগবে,আমাকে দিতেই হবে,কিন্তু আজ বুঝি,কারও হাসি ধরে রাখতে নিজের স্বপ্নকে একটু পিছিয়ে দেওয়ার মধ্যেই আসলে সবচেয়ে বড় শান্তি লুকানো থাকে।


জীবন থেকে শিক্ষা নিতে নিতে আসলে আমি বুঝেছি,বিলাসিতা কমিয়ে দেওয়া মানে খারাপ থাকা নয়,বরং যারা ভালোবাসার জায়গায় থাকে,তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া,এটাই বড় হওয়া।এটাই সত্যিকারের পরিপক্বতা।


সাকসেস আসলে এখানেই_!

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url